ইঁদুরের উপর করা এক গবেষণায় দেখা যায় যে একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের সীমিত গ্রহণ বার্ধক্যের প্রভাবকে ধীর করে দিতে পারে। এমনকি এর ফলে তাদের জীবনকালও দীর্ঘায়িত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এখন ভাবছেন যে এই বিষয়টা মানুষকে তাদের দীর্ঘায়ু এবং জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে কিনা।
আমরা প্রাণরসায়নে যেসব অ্যামিনো অ্যাসিডের আলোচনা করে থাকি, সেগুলোর মধ্যে মূলত ৩টিতে শাখান্বিত শৃঙ্খল থাকে। এমনি একটি কিউট অ্যামিনো অ্যাসিড হলো আইসোলিউসিন। এটি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু যেহেতু আমাদের কোষগুলো দেহের মধ্যে এটি তৈরি করতে পারে না, তাই আমাদেরকে ডিম, দুগ্ধ, সয়া প্রোটিন এবং মাংসের মতো উৎস থেকে এটি পেতে হয়। কিন্তু ভালো জিনিসেরও আবার সাইড ইফেক্ট থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন প্রদেশের বাসিন্দাদের থেকে পাওয়া ২০১৬-১৭ সমীক্ষার ডেটা ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে যে খাদ্যতালিকায় আইসোলিউসিনের মাত্রা বিপাকীয় স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত ছিল এবং যাদের বিএমআই অনেক বেশি তারা বেশি পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড গ্রহণ করতো।
তো, সাম্প্রতিক গবেষণায় ইঁদুরের একটি জিনগতভাবে বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠীকে কিছু খাবার খাওয়ানো হয়। খাবারগুলোতে সমস্ত অ্যামিনো অ্যাসিড স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেওয়া হয় অথবা শুধুমাত্র আইসোলিউসিনের অনুপাত কমিয়ে দেওয়া হয়। গবেষণার শুরুতে ইঁদুরগুলো প্রায় ৬ মাস বয়সী ছিল, যা একজন ৩০ বছর বয়সী মানুষের সমতুল্য বয়স। তাদেরকে যেই গ্রুপের খাদ্য দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে থেকে তারা যত ইচ্ছে খেতে পারবে এই সুযোগও ছিল।
এরপর ফলাফল কী পাওয়া যায় পরবর্তীতে? বুম! বিজ্ঞানীরা দেখলেন, পুরুষ ইঁদুরের আয়ুষ্কাল ৩৩% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে তা ৭%। এছাড়াও তাদের দুর্বলতা হ্রাস পেয়েছে, চর্বি কমেছে এবং গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ উন্নত হয়েছে। এই ইঁদুরগুলো পেশিশক্তি, সহনশীলতা, রক্তে শর্করার মাত্রা, লেজের ব্যবহার এবং চুল পড়া সহ স্বাস্থ্যের ২৬টি বিষয়ের বিবেচনায় ভালো স্কোর পেয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন ইঁদুরের স্ট্রেনে সাধারণ টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। মজার ব্যাপার হলো, কম আইসোলিউসিনযুক্ত খাবার খাওয়া ইঁদুরগুলো অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলেও তাদের ওজন বাড়েনি, বরং শারীরিকভাবে আরও ফিট ছিল ওরা।
গবেষকেরা মনে করছেন যে মানুষের মধ্যে যদি এই কাজটা করা যায় অর্থাৎ আইসোলিউসিনের পরিমাণ কমিয়ে দেহের প্রভাব লক্ষ্য ক্রয়া যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে আশাজনক কিছু পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সেটা মডিফাইড খাবার প্রদান কিংবা ফার্মাসিউটিক্যাল উপায়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদিও আমাদের ক্ষেত্রেও বার্ধক্য আটকানোর মতো একটা সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারব না যতক্ষণ না এটি মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়।
আসলে কথাটা বলা সহজ হলেও কাজে দেখানো এতো সহজ না। যদিও ইঁদুরকে খাবার প্রদানের সময় খাদ্যের উপাদান নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। কিন্তু খাবারে আসলে অবিশ্বাস্যভাবে নানান জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া থাকে। ফলে আসল ফলাফল পেতে গিয়ে বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব মিলেমিশে যেতে পারে। আরও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সাধারণভাবে প্রোটিন গ্রহণ সীমিত করার ফলে শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন যে শুধুমাত্র আইসোলিউসিনকে কেন্দ্র করে মানুষের উপর গবেষণা চালানো যেতে পারে। (মূল প্রবন্ধঃ Cutting Back on One Amino Acid Increases Lifespan in Middle-Aged Mice Up to 33%)