Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

ব্ল্যাকহোলের চৌম্বকক্ষেত্র

লেখক : রুশলান রহমান দীপ্ত

2019 সালে সর্বপ্রথম মানুষ ব্ল্যাকহোলের বাস্তবিক চিত্র দেখতে পায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আটটি টেলিস্কোপের সাহায্যে গঠিত ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (EHT)-এর সাহায্যে 55 মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে থাকা M87 (Messier 87) নামক গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি বিশালাকার ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা হয়। আইন্সটাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার আবারও জয় হয়। কিন্তু ছবিটি থেকে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। এটি পূর্বের মডেলগুলোর সত্যতা ও বৈধতা প্রমাণ করেছিল মাত্র।

সম্প্রতি 24 মার্চ 2021 সালে ব্ল্যাকহোলটির আরেকটি তুলনামূলক পরিষ্কার চিত্র প্রকাশিত হয় EHT Collaboration-এর পক্ষ থেকে। এই ছবিতে দেখা যায় ব্ল্যাকহোলের চারপাশে থাকা উত্তপ্ত গ্যাস ঘূর্ণির মতো বাঁকানো অবস্থায় রয়েছে।

M 87 গ্যালাক্সির চারপাশে চৌম্বকক্ষেত্র

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, M87 ব্ল্যাকহোলটি থেকে যে আলো আমাদের টেলিস্কোপ এ ধরা পড়েছে তা হলো পোলারাইজড আলো বা সমবর্তিত আলো। ব্ল্যাকহোল আলো বিকিরণ করে না। এই আলোর উৎস, ব্ল্যাকহোলের চার পাশে থাকা উচ্চ গতি সম্পন্ন চার্জিত কণা যা ত্বরাণিত হওয়ার ফলে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন আলো বিকিরণ করে।

আলো এক প্রকার বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ। এর চৌম্বক ক্ষেত্র যে তলে কম্পিত হয়, তড়িৎ ক্ষেত্রের তল ঠিক তার লম্ব বরাবর হয়। যখন আলো কোন বিদ্যুৎ অথবা চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যায় তখন আলো ওই ক্ষেত্রের দিকের সাথে সমবর্তিত হয়ে যায়। অর্থাৎ, আলো একটি নির্দিষ্ট তলে কম্পিত হতে থাকে। এই কাজটি করে একটি পোলারাইজার। যেহেতু আমরা সমবর্তী আলো পেয়েছি কৃষ্ণবিবরটি থেকে তাই আমরা বলতে পারি আবশ্যিক ভাবে, ব্ল্যাকহোলের চার পাশে বিদ্যুৎ অথবা চৌম্বকক্ষেত্র বিদ্যমান। ব্ল্যাকহোলের চারপাশে সৃষ্ট এই চৌম্বকক্ষেত্রের মান 1-30 গাউসের সমান যা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের চেয়ে প্রায় 50 গুণ শক্তিশালী।

আলো একটি তাড়িত-চৌম্বক তরঙ্গ। এমতাবস্থায় একে একটি পোলারাইজারের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে এর সমাবর্তন সম্ভব।

এই চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎস কী?

ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা অথবা পড়ন্ত গ্যাসীয় বস্তু গুলো নিজেদের সাথে ঘর্ষণজনিত কারণে অতি উত্তপ্ত হয়। এতে গ্যাস প্লাজমা দশা প্রাপ্ত হয়। উত্তপ্ত প্লাজমায় প্রোটন, ইলেকট্রন গুলো মুক্ত অবস্থায় থাকে। আমরা জানি, চার্জিত কণার গতির ফলে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উদ্ভব হয় আর এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্র থেকেই চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।

নতুন এই আবিষ্কার আমাদের ব্ল্যাকহোলের চারপাশে গঠন, পরিবেশ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে, উচ্চ গতিতে পদার্থের আচরণ কেমন হয়, বিশেষ আপেক্ষিকতার বাস্তব প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয় গুলো হাতে কলমে আমরা আরো জানতে পারবো বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

তথ্যসূত্র : নেচার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।