নিজ প্রয়োজনে, ভাব প্রকাশের জন্য কথোপকথনের গুরুত্ব কে না জানে! সম-প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য, নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষার সুবিধার্থে রয়েছে কথোপকথন এক বিশেষ প্রক্রিয়া। এই আলাপচারিতা হতে পারে ভাষায়, ইঙ্গিতে কিংবা কোষীয় সংকেত আদান-প্রদানের সমন্বয়ে। কিন্তু কথাবার্তা কি শুধু এক শ্রেণির প্রাণীকুল বা অনুজীবকুলেই সীমাবদ্ধ? এই যোগাযোগ কি শুধু একই রাজ্যভুক্ত (kingdom)? না কি এর সকল প্রাণীই পারে?
এক কথায় বলতে গেলে, ভিন্ন রাজ্যের মধ্যেও এই কথোপকথন চলতে পারে, যেমন: ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্টের ক্ষেত্রে।
মানবজাতি একে-অপরের সাথে শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে কথোপকথন করে যাকে আমরা আওয়াজ বলি।
প্রকৃতিতে প্রাণীর এবং উদ্ভিদের কোষসমূহ তাদের মধ্যে রাসায়নিক সংকেত আদান প্রদান করে কথোপকথন করে থাকে। তারা অভ্যন্তরীণ আলাপচারিতা চালায় রসায়নের ভাষায়। এই প্রক্রিয়া মূলত ব্যাকটেরিয়াদের তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে, ফানজাইদের মিলিত হতে এবং মানবকোষকে বিভিন্ন ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করতে ভূমিকা রাখে। এই ধরনের রাসায়নিক যোগাযোগ গবেষকদের তাদের নিজস্ব কৌশলের মাধ্যমে কোষীয় নির্দেশনা প্রদান করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এক্ষেত্রে ভিন্ন রাজ্যের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবও নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে, যা বুঝতে আপাত দৃষ্টিতে আমাদের দুর্বোধ্য ঠেকবে। তবে তাদের এমন ভাষাগত আচরণের দিকটিকে নিয়ন্ত্রণ করেই গবেষকরা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে রক্ষার কৌশল বের করতে আশাবাদী। কিছু গবেষণায় মাইক্রো বা ন্যানো-স্কেল কণা পরীক্ষা করা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে একই ধরনের কোষের সাথে যোগাযোগ করে । তবে এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন ধরনের কোষের মধ্যে যোগাযোগ করতে সক্ষম কণার ব্যবহার এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
ACS-এর Nano Letters-এর একটি নতুন গবেষণায় গবেষকরা প্রথম সিস্টেমটি বর্ণনা করেছেন যা এমনি দুইটি নিঃসম্পর্ক জীবকে যোগাযোগ করাতে সক্ষম করে। গবেষকরা এমনি একটি ন্যানো-স্কেল অনুবাদক যন্ত্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন যাতে তারা দুইটি ভিন্ন জীবের মধ্যে রাসায়নিক সংকেত পাঠাতে পারেন- যা আদতে প্রকৃতিতে খুব কমই ঘটে। দলটি মূলত দুইটি অণু দ্বারা পূর্ণ সিলিকা ন্যানো পার্টিকেল থেকে ন্যানো ট্রান্সলেটরটি তৈরি করেছে: যার একটি ফ্লিওমাইসিন নামক অণু এবং আরেকটি অণু যা গ্লুকোজের সাথে বিক্রিয়া করে। তারা যে সিগন্যালিং সিস্টেমটি তৈরি করেছিলেন তা মূলত দুটি ধাপে ছিল, যা তারা স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করে তারপর একসাথে রেখেছিলেন।

প্রথমে গবেষকরা E.coli -কে ল্যাকটোজ দ্রবণে উন্মুক্ত করে একটি সংকেত তৈরি করেছিলেন। উক্ত ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোজকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করেছিল, যা ন্যানো ট্রান্সলেটরের সাথে বিক্রিয়া করে। এরপর ডিভাইসটি সেই ফ্লিওমাইসিন নামক যৌগকে ত্যাগ করে। Saccharomyces cerevisiae নামক ইস্টটি ফ্লিওমাইসিনটিকে শনাক্ত করে এবং ফ্লোরোসেন্টের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা করতেই মূলত তারা জিনগতভাবে গঠিত। গবেষকরা অনুরূপ ন্যানো ট্রান্সলেটর ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অনেক সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশন ইতোমধ্যেই কল্পনা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ এই ডিভাইস কোষগুলোকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ করতে এবং চালু করতে বা রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানুষের ইমিউন কোষগুলোর কার্যকলাপ পরিবর্তন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: