অনেক নক্ষত্রে ভরে গেছে এই সন্ধ্যার আকাশ — এই রাতের আকাশ;
এইখানে ফাল্গুনের ছায়া-মাখা ঘাসে শুয়ে আছি;
এখন মরণ ভালো — শরীরে লাগিয়া রবে এই সব ঘাস;
অনেক নক্ষত্র রবে চিরকাল যেন কাছাকাছি।
উপরের চরণগুলো হয়ত কোন এক ফাল্গুনে রাতের আকাশ দেখে লিখেছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ! হাজারো নক্ষত্রের ভিড়ে নিজ জীবনের ক্ষুদ্রতাও হয়ত অনুভব হয়েছিল! তার কাছে কাব্যভাষায় হয়ত মনে হয়েছিল নক্ষত্র আজীবন থেকে যাবে, কিন্তু মানুষ থাকবে না! থেকে যাবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, রাতের আকাশ! নক্ষত্ররা এমনই। আমাদের জীবদ্দশায় আমরা নক্ষত্রের জন্ম, মৃত্যু দেখতে পাই না। এমনকি বহু বহু বছর ধরে তাকালেও রাতের নক্ষত্রের কোন পরিবর্তনও বোঝা যায় না। তাই বলে কি নক্ষত্রের জন্ম, মৃত্যু হয় না? ওরা কি আজীবন ওরকমই আছে? না! নক্ষত্রের জন্ম হয়, তাদেরও হয় মৃত্যু। আজকের লেখায় আমরা জানবো নক্ষত্রের জন্মের প্রাথমিক একটি ধারণা।
আমাদের বাসস্থান মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ব্যাস ১২০০০০ আলোকবর্ষের মতো। এখানে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন! এত নক্ষত্র থাকা সত্ত্বেও আমাদের গ্যালাক্সির প্রায় ৯৯.৯% জায়গাই ফাঁকা। কোন নক্ষত্র নেই এখানে। শুধু আমাদের গ্যালাক্সি না। মহাবিশ্বের অধিকাংশ জায়গাই এরকম শূন্য। তবে এই ফাঁকা জায়গাগুলোতে যে কিছুই নেই তা কিন্তু না। মধ্যকার এই ফাঁকা স্থানটি খুবই হালকা ঘনত্বের গ্যাসসমৃদ্ধ। এই মাধ্যমটি একেবারে শূন্য নয়। একে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম (Interstellar Medium) বলে। আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের ৯৯ শতাংশ গ্যাস দ্বারা গঠিত আর বাকি ১ শতাংশ গঠিত আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা দিয়ে। গ্যাসের ভিতরে প্রায় ৭৫ শতাংশই হাইড্রোজেন আর ২৫ শতাংশ হিলিয়াম। এছাড়াও আরও কিছু বড় বড় অণুরও অস্তিত্ব আছে। যেমন মিথানল, অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদির খুবই সামান্য পরিমাণের অস্তিত্ব আছে।
আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস অনেক অনেক হালকা। এই গ্যাসে প্রতি ঘনসেন্টিমিটার এ মাত্র ১ টা অণু পাওয়া যায়। অন্যদিকে আমাদের পৃথিবীর বায়ুতে প্রতি ঘনসেন্টিমিটার এ অনুর সংখ্যা 3\times 10^{19} টি! বায়ুর চেয়ে কতটা হালকা এই গ্যাস তা সহজেই অনুমেয়। আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের সমন্বয়ে হয় আনবিক মেঘ (molecular cloud)। আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা প্রধাণত কার্বন, সিলিকেট দিয়ে গঠিত। এছাড়াও বরফ কিংবা লৌহও থাকতে পারে। এসব ধুলিকণার আকৃতি খুবই ক্ষুদ্র। এক একটা ধুলিকণা আকারে ০.৫ থেকে ৫০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত হতে পারে! ধুলিকণাগুলোও আবার অনেক দূরে দূরে অবস্থান করে। ১টি ধুলিকণা থেকে অপরটির মধ্যকার দূরত্ব গড়ে ১০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ধুলিকণাগুলোর আকারও সুষম নয়। অনিয়মিত আকারের ধুলিকণাগুলো ইতস্তত ছোটাছুটি করতে থাকে। আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের বিন্যাসও সুষম নয়। এরা মহাকাশে বিক্ষিপ্তভাবে বিন্যস্ত। এক এক অংশে গ্যাসের পরিমাণ, ঘনত্ব এক এক রকম। আণবিক মেঘ কিন্তু অল্প জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এক এক গুচ্ছ আণবিক মেঘ বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। এবং এই মেঘখন্ডের ভরও অনেক। এক একটি মেঘখন্ড সূর্যের চেয়ে কয়েক হাজারগুন পর্যন্ত ভারী হতে পারে। এই বিশাল মেঘখন্ডগুলো গতিশীল থাকে, স্থানে স্থানে ঘুরতে থাকে। মানে কোন সাধারণ গতিতে এরা থাকে না। এইসব মেঘখন্ডের গতি খুবই ইতস্তত । একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। সাধারণ আবহাওয়ায় হালকা বাতাস বয়ে যায় একদিক দিয়ে। কিন্তু ঝড়ো আবহাওয়ার সময় বাতাসের তান্ডব যেমন থাকে এই সব মেঘখন্ড ও সেভাবে ছোটাছুটি করতে থাকে। তো এতে কোথাও কোথাও মেঘের ঘনত্ব বেশি আবার কোথাও কোথাও কম হয়। যে সব জায়গা বেশি ঘন হয়, সেসব জায়গা নতুন নক্ষত্র সৃষ্টির মূল জায়গা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আমাদের মহাকাশে এত পরিমাণ শক ওয়েভ রয়েছে যে এসব শক ওয়েভ এসে আঘাত করে এই মেঘখন্ডে। এই শকওয়েভ একখন্ড আনবিক মেঘকে অতিক্রম করার সময় মেঘের আকৃতিই পরিবর্তন হয়ে যায়! কোথাও সৃষ্টি হয় হালকা ঘনত্বের জায়গা আবার কোথাও ঘনত্ব থাকে খুব বেশি! এসব ঘন জায়গাতে এবার শুরু হয় মহাকর্ষের খেলা। মহাকর্ষের কারণে এসব জায়গা আরও সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে আশপাশের গ্যাস টেনে নেওয়ার মাধ্যমে। একখন্ড আনবিক মেঘের মাঝে এই যে ক্ষুদ্র একটি অংশ সংকুচিত হওয়া শুরু করলো, এতেই ঐ অংশটির তাপমাত্রা বেড়ে যায় অনেক বেশি পরিমাণে। সাধারণত আনবিক গ্যাসের তাপমাত্রা পরমশূণ্য তাপমাত্রার কাছাকাছি থাকে। কিন্তু এই সংকুচিত অংশের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ৩০০ কেলভিনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ এভাবে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকে৷ সংকুচিত অংশের আকার ১০০০০ AU এর কাছাকাছি হতে পারে। সংকোচন এখানেই থেমে থাকে না। মহাকর্ষের কারণে সংকোচন হতেই থাকে। এই বিশাল আনবিক মেঘখন্ডের সামান্য এই অতি উত্তপ্ত সংকুচিত জায়গাটি থেকে পরবর্তীতে নতুন তারকার জন্ম হবে। এই অংশটির নাম এখন Pre stellar core! (প্রাক-নাক্ষত্রিক অন্তঃস্থল)। এই অংশ সংকুচিত হতেই থাকে। প্রায় ৫০০০০ বছর ধরে চলে এই সংকোচন! তারপর এই সংকুচিত স্থানের আকার নেমে আসে 1000 AU তে।
ততদিনে কোরের চারপাশে চাকতি বা ডিস্কের মতো একটি অংশ তৈরি হয়ে যায়। আশপাশের গ্যাস এই চাকতির পাশে জড়ো হতে থাকে। মহাকর্ষের প্রভাবে ছুটে যেতে চায় কেন্দ্রীয় এলাকার দিকে। এভাবে এলাকাটি বড় হতে থাকে ধীরে ধীরে. এই অংশটি আবার একটি কেন্দ্রীয় অক্ষের চারপাশে ঘুরতে থাকে। এই কেন্দ্রীয় অক্ষের দুইপাশ থেকে গ্যাস সবেগে বেরিয়ে আসতে থাকে। যাকে জেট (Jet) বলা হয়। এসব জেট লম্বায় ১ আলোকবর্ষ পর্যন্ত হতে পারে। এই প্রচন্ড গতিতে ছুটন্ত লম্বাকার জেটগুলো যখন আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসকে আঘাত করে তখন সেখানে মেঘাচ্ছন্ন আলোকচ্ছটার মতো দেখা যেতে পারে। একে হার্বিগ হ্যারো অবজেক্ট বলা হয়
এই অবস্থাকে এখন নাম দেওয়া হয় প্রোটোস্টার। সংকোচনের সময় আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ঘটে। এসময় কোরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় অনেক বেশি পরিমাণে। এতটাই বেড়ে যায় যে এর ভিতর যেসব গ্যাসগুলো ছিলো সেগুলো উত্তেজিত হয়ে আয়নিত হয়ে যায়। এসময় ভিতরে থাকে ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট পরমাণুর নিউক্লিয়াস আর মুক্ত ইলেকট্রন। ছোটাছুটি করতে থাকে এরা এই উত্তপ্ত জায়গাতে। নিউক্লিয়াস মুক্ত মানে এখানে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তার ফলে তৈরি হতে থাকে প্রচুর শক্তি।
এখানে কয়েকটা ঘটনা এখন একসাথে শুরু হয়। একদিকে মহাকর্ষ চাইছে সংকোচন করতে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অংশে তৈরি হওয়া তাপীয় শক্তি চাইছে সংকোচন প্রতিরোধ করতে। এই দুইশক্তি একসময় সমান হয়ে যায়। কেউ কারো উপরে প্রাধান্য বিস্তার করে না। তখন তারাটির না হয় সংকোচন, না হয় প্রসারণ। ওদিকে নিউক্লিয়ার রিয়্যাকশনের কারণে তারাটি আলোকশক্তিতে ভাস্বর হতে পারে (H-II Region)। এ অবস্থায় তারাটির নাম হয় T-Tauri star। এসময় তারাটি দৃষ্টিতে আসে, তবুও তারাটি থেকে যায় আনবিক মেঘের ভিতরেই!
এইসব প্রাথমিক তারাগুলো থেকে আগত আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আগত আলোর উজ্জ্বলতা অনেক বেশি পরিমাণ ওঠানামা করছে, কারণ এদের আলো আসছে আনবিক মেঘের ভিতর থেকে! তারাটি এখন মোটামুটি স্থায়ী একটা পর্যায়ে রয়েছে ঠিকই কিন্তু তারাটির চারপাশের চাকতির মতো জায়গা এখনও রয়ে গিয়েছে। এসব জায়গায় তৈরি হবে ঐ তারাটিকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহসমূহ! নতুন একটা সৌরজগত তৈরি হবে তারাটির চারপাশে। যত গ্রহ তৈরি হবে, সব এই চাকতির উপরেই থাকবে বা অন্যকথায় একই সমতলে থাকবে। আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো প্রায় একই সমতলে থাকার কারণও এইটা! তারাগুলো যখন এভাবে একটা স্থায়ী পর্যায়ে রূপ নেয় তখন এসব তারাদের বলা হয় মূল ধারার তারকা/Main sequence stars। প্রোটোস্টারের ভর যত বেশি হবে তত গ্র্যাভিটির পরিমাণ তত বেশি হবে, তত দ্রুত তারাটি মূল ধারার তারা হতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের সূর্য মূল ধারায় আসতে সময় নিয়েছে ৩০ মিলিয়ন বছর। অন্যদিকে হিসাব করে দেখা যায়, সূর্যের চেয়ে ১৫ গুন ভারী কোন তারা মূল ধারার তারা হতে সময় নেবে মাত্র এক লক্ষ ৬০ হাজার বছর। আবার যদি কোন তারার ভর সূর্যের মাত্র কুড়ি শতাংশ হয়, তাহলে তারাটিকে মূল ধারায় আসতে ১ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে!
CNO চক্র
কোন নক্ষত্র একবার মূল ধারার নক্ষত্রে পরিণত হবার পর শুরু হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তিই যে মহাকর্ষকে বাধা দেয় সেটা আগেই বলেছি। নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়াতে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে হালকা থেকে ক্রমান্বয়ে ভারী পদার্থ উৎপন্ন হয়।যেসব নক্ষত্র সূর্যের চেয়ে সর্বোচ্চ দেড়গুন ভারী তাদের ক্ষেত্রে শক্তির যোগানটা আসে প্রোটন প্রোটন চক্রের মাধ্যমে। আমাদের দেখা অধিকাংশ নক্ষত্রই সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভর বিশিষ্ট। যেসব নক্ষত্রের ভর সৌরভরের দেড়গুন থেকে বেশি তাদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের হাইড্রোজেন থেকে ক্রমান্বয়ে ভারী মৌলগুলো তৈরি হয় CNO চক্রের মাধ্যমে। CNO এর পূর্ণরূপ হলো কার্বন-নাইট্রোজেন-অক্সিজেন চক্র। নক্ষত্রের কেন্দ্রের তাপমাত্রা কিন্তু বেড়েই যাচ্ছে। এই তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যথন দেড় কোটি কেলভিনের কাছাকাছি পৌছায় তখন শুরু হয় CNO চক্রের বিক্রিয়াগুলো! বিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন শক্তি হিসাব করা যায় আইনস্টাইনের বিখ্যাত E=mc^2 সমীকরণ থেকে! প্রোটন প্রোটন চক্র ও CNO চক্রের বিক্রিয়াটি কিভাবে হয় সেটার চিত্র নিচে দেওয়া আছে: (বামে প্রোটন-প্রোটন চক্র, ডানে CNO চক্র। CNO চক্র শুরু হয় কার্বন থেকে।)
CNO Cycle Reaction
^{12}C_6 +^1H_1 \to ^{13}N_7 +\gamma \\\ ^{13}N_7 \to ^{13}C_6+e+\nu \\\ ^{13}C_6+^1H_1 \to ^{14}N_7 +\gamma \\\ ^{14}N_7 +^1H_1 \to ^{15}O_8+\gamma \\\ ^{15}O_8 \to ^{15}N_7 + e+\nu \\\ ^{15}N_7+^1H_1\to ^{12}C_6+^4He_2
ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকে। এবার ভারী মৌলগুলোর ফিউশন হতে থাকে। আরও ভারী মৌল তৈরি হতে থাকে। এভাবে একটি তারার বিবর্তন হতে থাকে। নক্ষত্রের ভিতরে প্রাথমিক অবস্থায় যে হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম ছিল, সেগুলোর জায়গায় এখন স্থান করে নিতে থাকো ভারী মৌলগুলো। জ্যোতির্বিদগণ নক্ষত্রে হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম ব্যতীত আর যে মৌলই তৈরি হোক না কেন, সেগুলোকে “ধাতু” আর ভারী মৌল বলে বিবেচনা করেন৷ যেমন ক্লোরিন কিন্তু গ্যাস। অথচ নক্ষত্রে ক্লোরিনকে ধাতু বলে চিহ্নিত করা হয়! ধরে নেওয়া হয়, নক্ষত্রটি ধাতু-সমৃদ্ধ! হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম ব্যতীত বাকি মৌলগুলো কতটুকু পরিমাণে আছে সেটা বোঝাতে জ্যোতির্বিদগণ Metallicity বা ধাতবতা নামে একটি রাশি ব্যবহার করেন। কোন নক্ষত্রের metallicity দেখে ঐ নক্ষত্রে ধাতুর পরিমাণ বিষয়ে আইডিয়া পাওয়া যায়।
১৯৪০ এর দশকে জ্যোতির্বিদরা গ্যালাক্সির তারাগুলোকে ২টা ভাগে ভাগ করেছিলেন। এক ধরনের তারাতে ধাতুর পরিমাণ বেশি, আরেক ধরনের তারাতে ধাতুর পরিমাণ কম। এই শ্রেণিবিভাগ দুইটি যথাক্রমে Population I এবং Population II নামে পরিচিত৷ পপুলেশন ১ এ যে তারাগুলো আছে, সেগুলোতে ধাতুর পরিমাণ ২-৩% পর্যন্ত থাকতে পারে। পপুলেশন ২ এ যে তারাগুলো সেগুলোতে ০.১% এরও কম ধাতু বিদ্যমান৷ আমাদের সূর্য পপুলেশন ১ নক্ষত্রের অন্তর্ভুক্ত। নক্ষত্রতে ধাতুর পরিমাণ থেকে সহজেই জ্যোতির্বিদগণ নক্ষত্রের বয়সসহ অন্যান্য তথ্যাদি হিসাব করতে পারেন। আর যেসব নক্ষত্রে কোন ধাতুই এখনো তৈরি হয়নি সেগুলো পপুলেশন ৩ নক্ষত্র।
পপুলেশন ৩ নক্ষত্রকে একটা তাত্ত্বিক ধারণা বলা যেতে পারে। পপুলেশন ২ নক্ষত্রের বয়স পপুলেশন ১ নক্ষত্রের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কারণে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। পপুলেশন ২ নক্ষত্রের বয়স বেশি কিন্তু ধাতুর পরিমাণ কম। তাহলে এমন কোন নক্ষত্র যদি থাকে যাতে ধাতু একেবারেই নেই তাহলে সেটার বয়স নিশ্চয়ই আরও বেশি হওয়া লাগবে! পর্যবেক্ষণকৃত ডাটা থেকে স্পষ্ট যে পপুলেশন ২ নক্ষত্রের বয়স ১০ থেকে ১৩ বিলিয়ন বছর! এদিকে হিসাবমতে বিগব্যাং হয়েছে ১৩.৮২ বিলিয়ন বছর আগে। তাহলে পপুলেশন ৩ নক্ষত্রের বয়স যদি পপুলেশন ২ এর থেকে একটু হলেও বেশি হয়, তাহলে পপুলেশন ৩ নক্ষত্র ঠিক বিগব্যাং এর পরপরই জন্ম নেওয়া লাগবে! হ্যা। এটাই! পপুলেশন ৩ নক্ষত্রের জন্ম এত আগে হয়েছিলো যে সেই সময়ের কোন নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতে পারলে আমরা বিগব্যাং এর ঠিক পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাবো। পপুলেশন ৩ নক্ষত্র কতটা উজ্জ্বল বা ভারী ছিল আমরা জানি না। এত পূর্বে জন্ম নেয়া পপুলেশন ৩ নক্ষত্র থেকে কোন আলো আমাদের কাছে এসে যদি পৌঁছায়ও তাহলে, তা হবে খুবই অনুজ্জ্বল। কিন্তু সেটা শণাক্ত করার মতো টেলিস্কোপ কি আমাদের আছে?
সম্প্রতি করা একটি স্টাডিতে দেখা গেছে, যদি এরকম কোন পপুলেশন ৩ নক্ষত্র থেকে আলো আসে তাহলে সেটা এতটাই অনুজ্জ্বল হবে সেটা JWST (James Webb Space Telescope) তেও ধরা পড়বে না! [1] তাহলে উপায়? উপায় হলো গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং। ভারী বস্তুর পাশ দিয়ে আলো আসার সময় স্থান-কালের বক্রতার কারণে আলো নিজেই আমাদের চোখে বেকে আসে। ঠিক লেন্সের ওপাশ দিয়ে আলো এপাশে আসার সময় যেভাবে বেকে চোখে আসে। এই বিষয়টিকেই বলে মহাকর্ষীয় লেন্সিং। কোন তারা হতে ধরুন সরাসরি আলো আমাদের চোখে আসে। কিন্তু যখন ঐ তারকার সামনে কোন ভারী বস্তু (গ্যালাক্সি ইত্যাদি), মহাকর্ষীয় লেন্সিং এ আলো বেঁকে আসার কারণে আগত আলোর দুইপাশে বৃত্তচাপের বিবর্ধিত মতো মনে হয়। একে আইনস্টাইনের রিং বলা হয়। এই রিং দেখে বোঝা যায় ভারী বস্তুর ওপাশে কিছু একটা আছে! এভাবে অপর পাশে অনুজ্জ্বল আলোক উৎসও বিবর্ধিত হয়ে দেখা দিতে পারে। এটাই দেখা যেতে পারে JWST তে। স্টাডিতে উঠে এসেছে এরকম তথ্য!
আমরা কি পারব সেই আলো শণাক্ত করতে? পপুলেশন ৩ নক্ষত্র নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। কেন তাদের দেখা এখনও পাওয়া যাচ্ছেনা বা সেগুলোর এতদিনে কি অবস্থা হয়েছে তা নিয়ে আছে বিতর্ক! তবুও আমরা চোখ রাখি ভবিষ্যতে। ততদিনে বাকি নক্ষত্রগুলো আলো দিয়ে যাক। ঠিক প্রথমে লেখা কবিতার চরণের মতো!
তথ্যসূত্র
[১] Can JWST see galaxies made of primordial stars? by Brian Koberlein, Universe Today