আমরা যারা বিড়াল পুষি তারা অনেকেই বিড়ালকে বাইরে ছেড়ে রাখি। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের প্রধাণ উদ্দেশ্য অনেকটা এমন যে – আমাদের বিড়াল বাইরে থেকে বাইরে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে এবং তাদের লাইফ অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর হবে। আবার অনেক বিড়াল আছে যাদেরকে বাইরে যেতে না দিলে চিল্লাচিল্লি করে বাড়ি মাথায় তোলে! কিন্তু বিড়ালদের এভাবে বাইরের পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া আসলে কতটুকু সঠিক সিদ্ধান্ত? ভেবেছেন কখনও? এ প্রসঙ্গে গবেষকরা কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করছেন! তাদের গবেষণামতে পোষা বিড়ালকে বাইরে বের হতে না দেওয়াই বিড়ালের জন্য উপকারী! কিন্তু কেন? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বাইরে বের হওয়া পোষা বিড়ালদেরকে নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণা প্রবন্ধটি গত ২১ নভেম্বর Frontiers in Ecology and Evolution নামক এক জার্নালে প্রকাশিত হয়। এজন্য তারা ওয়াশিংটন ডিসি শহরের বিভিন্ন স্থানে ৬০টি মোশন ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন। (এই ক্যামেরাগুলো নড়াচড়া করে আশেপাশের পরিবেশের ছবি ভালোভাবে তুলতে পারে)। সবশেষে তাদের মতামত হচ্ছে, কমপক্ষে বিড়ালের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য হলেও বিড়ালকে বাইরে যেতে দেওয়া উচিত না! আর বিড়ালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানুষের দায়িত্ব!
কেন পোষা বিড়ালকে বাইরে যেতে দেওয়া উচিত না, সেই ব্যাপারে এই গবেষকদের প্রধান কিছু পয়েন্ট নিচে আলোচনা করা হলো।
১. বিড়ালের নিজস্ব শারিরীক নিরাপত্তা
গবেষকদের লাগানো ক্যামেরা থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, ৬১% বিড়ালকে র্যাকুনের বিচরণস্থলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ৬১% কে অ্যামেরিকান রেড ফক্সের আবাসস্থলের আশেপাশে এবং ৫৬% বিড়ালকে ওপোসাম (opossums) – দের সাথে মেলামেশা করতে দেখা গিয়েছে! বিষয়টি উদ্বেগজনক; কেননা এই তিন ধরনের প্রাণী থেকেই জলাতঙ্ক ছড়ায়। তাই এই ধরনের প্রাণী থেকে বিড়ালেরও জলাতঙ্ক হতে পারে। তাই বিড়ালকে সুস্থ্ রাখার জন্য বাইরে বের হতে না দেওয়াই ভালো! বাংলাদেশের বিড়ালগুলোও যেসব জায়গায় চলাফেরা করে সেসব জায়গা থেকে নানা রোগ-বিরোগ নিয়ে আসা অসম্ভব কিছু না। এছাড়াও অনেক দুষ্ট মানুষ আছেন যারা অকারণে বিড়ালদের নির্যাতন করে থাকেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে!
২. মানুষের শারিরীক নিরাপত্তা
আগের পয়েন্টে আমরা আলোচনা করেছি যে, জলাতঙ্কের জীবাণু বহনকারী বিভিন্ন প্রাণির সংস্পর্শে আসার ফলে বিড়ালের জলাতঙ্ক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে! একই কথা খাটে মানুষদের জন্যেও। আপনার পোষা বিড়াল বাইরে থেকে জলাতঙ্কের জীবাণু বহন করে নিয়ে আসলে তা যে আপনাকেও আক্রমণ করবে না; তার নিশ্চয়তা কতটুকু? তাই নিজে এবং নিজের বিড়ালকে সুস্থ্য রাখতে হলে বিড়ালকে বাইরে বের হতে দেওয়ার অভ্যাস বন্ধ করা জরুরি।
৩. পারিপার্শ্বিক জীববৈচিত্র রক্ষা
গবেষকরা লক্ষ করেন যে, বাইরে ঘুরে বেড়ানো বিড়ালরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ ইত্যাদি প্রাণী শিকার করছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, যেহেতু এগুলো আমাদের সাপেক্ষে অপকারী জীব; সেহেতু এগুলো শিকার করলে কোনো সমস্যা নেই! কিন্তু আদতে এসব প্রাণী শিকার করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মজার ব্যাপার যে, বিড়াল ইঁদুর শিকার করার কারণ হচ্ছে যে, বিড়াল ইদুরকে ভয় পায়; বলছেন গবেষকরা। তাই পরিবেশের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিড়ালকে সামলে রাখা জরুরি। সর্বোপরি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পোষা বিড়ালকে বাইরে ছেড়ে দিলে তা আসলে আমাদের জন্য উপকারের বদলে ক্ষতিই বয়ে আনতে পারে! তাই যতটুকু সম্ভব নিজের পোষা বিড়ালকে ঘরেই রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।
তথ্যসূত্র
Daniel J. Herrera et al, Spatial and temporal overlap of domestic cats (Felis catus) and native urban wildlife, Frontiers in Ecology and Evolution (2022). DOI: 10.3389/fevo.2022.1048585